সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: বাংলাদেশের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: বাংলাদেশের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: বাংলাদেশের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা

প্রকাশ: ২০২৫ • লেখক: ব্লগার / সাংবাদিক




ভূমিকা: কেন সামাজিক নিরাপত্তা এখন জাতীয় প্রাথমিকতা?

বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করলেও সামাজিক ঝুঁকি—দুর্যোগ, অসুস্থতা, বয়স্কত্ব, বিধবা বা প্রতিবন্ধিতা—এই সব কারণে অনেকে দুর্বল অবস্থায় থেকেই যায়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

সামাজিক নিরাপত্তার ধারণা ও লক্ষ্য

সামাজিক নিরাপত্তা শুধু ভাতা নয়—এটি নগদ সহায়তা, ভাউচার, স্বাস্থ্যসেবা, ভর্তুকি, কর্মসংস্থান ও দুর্যোগ-প্রতিরোধের সমন্বয়। মূল লক্ষ্যগুলো:

  • দারিদ্র্য হ্রাস ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  • নাগরিকদের মৌলিক জীবিকাসহায়তা ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  • নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো।

বাংলাদেশে প্রধান কর্মসূচি (সংক্ষেপে)

  • বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা
  • শিশু ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা
  • কৃষক ভাতা ও প্রান্তিক কৃষক সহায়তা
  • কর্মসংস্থান-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প
  • দুর্যোগ-প্রতিক্রিয়া ও পুনর্বাসন প্যাকেজ

বাংলাদেশের অর্জন

গত দুই দশকে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে:

  • ভাল কাভারেজ শুরু হয়েছে: সরকারি তালিকা ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রি তৈরির দিকে ধাপ নেওয়া হয়েছে।
  • ডিজিটাল পেমেন্ট: বিকাশ, নগদ ও ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে ভাতা দ্রুত ও বেশি নিরাপদভাবে পৌঁছেছে।
  • টার্গেটেড প্রোগ্রাম: শিশু পুষ্টি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কৃষক ভাতা ইত্যাদি কার্যকর প্রভাব ফেলছে।

ফিল্ড রিয়েলিটি: মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা

কেস স্টাডি: বরিশালের এক ইউনিয়নে মাতৃত্বকালীন সহায়তা পেয়ে স্থানীয় মায়েরা হাসপাতাল খরচ ও শিশুর টিকা আদায় করতে পেরেছেন, ফলে শিশু-স্বাস্থ্য সূচকগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।

সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ

  1. টালিকাভুক্তি ত্রুটি: বহু প্রকৃত উপকারভোগী প্রশাসনিক কারণে বাদ পড়ে; অপরদিকে অনেকে অনৈতিকভাবে তালিকাভুক্ত হন।
  2. অর্থায়ন সংকট: পর্যাপ্ত বাজেট না হলে সেবার মান ও পরিধি সীমিত থাকে।
  3. বিতরণ ব্যবস্থায় অনিয়ম: স্থানীয় রাজনৈতিক নোংরামি ও মধ্যস্বত্বভোগী কারণে প্রকৃত সুবিধাভোগী বঞ্চিত হন।
  4. পরিমাণ ও কার্যকারিতা: অনেক সময় প্রদত্ত ভাতা মৌলিক চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল।
  5. দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তর কৌশল অনুপস্থিত: ভাতা গ্রহীতাদের কর্মসংস্থান-যোগ্য করে তোলার কার্যকর পরিকল্পনা অপর্যাপ্ত।

নীতিগত ও প্রযুক্তিগত অসঙ্গতি

স্বচ্ছ, আপ-টু-ডেট ডাটা ও বায়োমেট্রিক যাচাই-প্রক্রিয়া ছাড়া কার্যকর টার্গেটিং কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেট রেকর্ড, আইডি যাচাই সমস্যা ও ব্যাঙ্ক-এজেন্ট নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কারণে বিতরণে বিলম্ব ঘটে।

আন্তর্জাতিক পাঠ ও ভালো অনুশীলন

  • ভাতা + দক্ষতা উন্নয়ন: নগদ সহায়তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিলে বেনিফিশিয়ারিরা স্বল্প সময়ে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর হতে পারে।
  • স্বচ্ছতা ও অডিট: নিয়মিত তত্ত্বাবধান অনিয়ম কমায়।
  • পাইলট-ভিত্তিক স্কেল-আপ: আগে পাইলট করে সিস্টেম ঠিক রেখে পরে বিস্তার করা যুক্তিযুক্ত।

সংক্ষেপিত সুপারিশ

  • ডিজিটাল/বায়োমেট্রিক ডাটাবেস আপডেট রাখা প্রয়োজন।
  • ভাতার পরিমাণের পুনঃনির্ধারণ ও দরিদ্রতা-ভিত্তিক টার্গেটিং দরকার।
  • ভাতা-প্রদানকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
  • স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছ অডিট ও গ্রিভ্যান্স মেকানিজম চালু রাখতে হবে।
সংবাদিক নোট: মাঠ পরিস্থিতি ও সরকারি নীতির মিলনের ভিত্তিতে লিখিত এই প্রতিবেদনটি নীতিনির্ধারক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য ব্যবহারযোগ্য সুপারিশও দেয়।

রেফারেন্স ও আরও পড়ুন

নিচের লিংকগুলো আর্টিকেলটির পাঠযোগ্যতা ও রেফারেন্স বাড়াতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো:

© ২০২৫ — আপনার ব্লগের নাম। অনুগ্রহ করে কপিরাইট ও সোর্স নীতিমালা মেনে লিংক শেয়ার করুন।